• সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

উলিপুরে মাদরাসাগুলোতে অবৈধ পদোন্নতির হিড়িক 

রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 
Update Time : রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিl

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসায় চলছে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবৈধ পদোন্নতির মহোৎসব। একটি মাদরাসায় পদোন্নতির নামে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য দেখে অন্য মাদরাসাগুলোও জড়িয়ে পড়ছে একই কৌশলে। এনটিআরসিএ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) এর অনুমোদন ও নিবন্ধন ছাড়াই এসব পদোন্নতির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছেন চরকলাকাটা গণি মিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মশিউর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, তিনি উপজেলার আরও কয়েকটি মাদরাসায় এ ধরনের অনিয়মে জড়িত আছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি জানলেও অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।সরেজমিনে অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, উপজেলার অন্তত তিনটি মাদরাসায় এমন অবৈধ পদোন্নতির ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট মাদরাসাগুলোর সুপার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।নারিকেলবাড়ি দাখিল মাদরাসার তৎকালীন সুপার রবিউল আওয়াল অফিস সহকারীর পদে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে মাহফুজুর রহমানকে ইবতেদায়ী মৌলভী পদে এমপিওভুক্ত করেন। তবে, অফিস সহকারীর পদে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে অর্থ নিলেও নিয়োগ দিতে না পারায় ওই মাদরাসায় অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধে শারীরিক হেনস্তার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার মাঈদুল ইসলাম বিএসসি বলেন, “মাহফুজুর রহমানের নিয়োগ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।”চরকলাকাটা গণি মিয়া দাখিল মাদরাসায় বিধিবহির্ভূতভাবে ২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও এমপিও শিটে ৪ জনের পদবী উল্লেখ করা হয়নি। শিক্ষা তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরো (BANBEIS) এর ২০২৩ সালের বার্ষিক জরিপ অনুযায়ী, তাদের মধ্যে মোখলেছুর রহমানকে সহকারী শিক্ষক (জুনিয়র) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তিনি অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে, মনিরুজ্জামানকে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চিনলেও তার পদবী নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার মশিউর রহমান রুঢ় স্বরে বলেন, “আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার আপনি কে? আপনি কি আমার কর্তৃপক্ষ?” পরে তিনি আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।হাতিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার এপ্রিলে/২৫ মাসের এমপিও শিটে ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৫ জনের পদবী উল্লেখ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর অভিযোগ, সুপার বদর উদ্দিন আহম্মেদ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতির কারণে এসব পদবী প্রকাশ করতে পারছেন না। বিল বিতরণ শিটে ইদ্রিস আলীকে ইবতেদায়ী মৌলভী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, সুপার বদর উদ্দিন গোপনে তার মেয়েকে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ইদ্রিস আলীকে সেই পদে এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা করছেন।বিধিবহির্ভূত এসব পদোন্নতি ও নিয়োগ দেখেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই। না আছে কোনো তদন্ত, না চাওয়া হয়েছে কৈফিয়ত। এনটিআরসিএ-এর একজন উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ছাড়া কোনো শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটলে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালকও বলেন, “প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এ বিভাগের আরও সংবাদ