ভোলা জেলা প্রতিনিধি এস, এম নবীন হোসেন।
কর্মবীর নলিনী দাসের দ্বীপ জেলা ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, সম্ভাবনাময় এই জেলার মানুষ যুগের পর যুগ ধরে অবহেলিত থেকেছে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও সঠিক আইনানুগ উন্নয়নহীনতার কারণে। সঠিক আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় ভোলা জেলার প্রতিটি লোকই অন্ধকারে ডুবন্ত। ফলে ভোলা জেলায় সরকারী পদবীতে যারা চাকরিজীবী তাদের দ্বারাও ভালো মানুষের জন্য তৈরি হয় চরম মানবসৃষ্ট দূর্দশা। এক কথায় ভোলা জেলার সকল চেয়ারেই ময়লা এবং প্রত্যেকটা অফিসেই হারাম খাবার। হালাল খবার খেতে চাওয়া কোন ব্যক্তিই ভোলা জেলায় ভাত পায় না। হয়তবা এর মধ্য দিয়ে পরকালে বেহেশতে যাওয়ার একটা দরজা খোলা আছে। তা হলো যাতায়াতের জন্য নদী পথ। কেননা- নদী পথে যাতায়াতের দূর্ঘটনায় মৃত্যূ ঝুঁকি বেশি। মুসলমান ধর্মের হুজুরেরা হাদিসের বরাত দিয়ে বলে যে, নদীতে পানির ভিতর মারা গেলে জান্নাতবাসী। ভোলা জেলার মানুষকে এভাবে জান্নাতবাসী করার জন্য ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মান কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে কিনা- কেউ-ই জানে না। ভোলা জেলার মানুষ জেলার বাইরে যাওয়ার দরকার হলেই একমাত্র উপায় নদীপথ। আর সেই নদীপথে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভোলার মানুষকে। তাই ভোলা জেলাবাসীর ভোলা-বরিশাল ব্রীজের দাবী বিগত স্বাধীন বাংলাদেশের চুয়ান্ন বছর ধরেই। দাবীটি দাপ্তরিক হয়েছে বিগত প্রায় এক দশক যাবত। ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মানের প্রতিশ্রুতি এসেছে বারবার, হয়েছে আশ্বাসের বহুরূপী বৃষ্টি, কিন্তু বাস্তবায়নের দেখা মেলেনি আজও। তাই এখন একটাই দাবি ভোলা-বরিশাল সেতু দ্রুত বাস্তবায়ন চাই, আর কোন আশ্বাস নয়।এই সেতু শুধু ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নয়, এটি দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্ট। সেতুটি হলে ভোলা সড়কপথে সরাসরি বরিশালের সাথে সংযুক্ত হবে। সেখান থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে, পর্যটন বিকশিত হবে, বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে, তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরো দক্ষিণাঞ্চল বদলে যাবে।কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্যি হলো এই যে, রাজনীতির নেতাদের রাজনৈতিক ভাষণে, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে, ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তিতে বারবার ভোলা- বরিশাল ব্রীজের নাম এলেও, বাস্তবে ব্রীজ স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি আজও। ভোলার মানুষ কেবল অপেক্ষা করেই যাচ্ছে। এখন সবার-ই প্রশ্ন এই অপেক্ষা আর কতদিন চলব?প্রতিনিয়ত নদী পার হতে গিয়ে যে ঝুঁকি, সময়, জীবননাশ ও অর্থ অপচয় হয়, তা আজ এই আধুনিক যুগে দুঃখজনক। একটি সেতু কেবল ইট-পাথরের কাঠামো নয়, এটি যোগাযোগের একটি মাইলফলক, উন্নয়নের সেতুবন্ধন, আর জনগণের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আধুনিক ও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা সকল উন্নয়নের-ই পূর্ব পরিচয়। যেহেতু ভোলার মানুষের সড়ক যাতায়াতের ব্যবস্থা নাই তাই ভোলাতে কোন উন্নয়নও নাই। উন্নয়নের নামে যদিও কিছু হয়ে থাকে- তা আসলে পুরোপুরি অসভ্যতামি হয়েছে।ভোলার মানুষ আজ সোচ্চার, ঐক্যবদ্ধ। তারা আর আশ্বাসে বিশ্বাস করে না। তারা চায় কার্যকর পদক্ষেপ। চায় একটি সময় নির্ধারিত পরিকল্পনা। এখনই সময় ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্মাণ শুরু করার।এই দাবির পেছনে রয়েছে লাখো মানুষের স্বপ্ন, আশা, আর অধিকার। তাদের কণ্ঠস্বর যেন ব্যর্থ না হয়, তাদের আকাঙ্ক্ষা যেন না থেমে যায় রাজনৈতিক গেটআপে।ভোলাবাসীর একটি মাত্র দাব“ভোলা-বরিশাল সেতু চাই, দ্রুত চাই, বাস্তবায়ন চাই—আর কোন আশ্বাস নয়।” ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবীটি সাংবাদিক মোঃ আবুল কাশেমের আবেদনে অফিসিয়ালী নথিজাত হয় গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে। তাতে সাংবাদিকের কলম নামক অস্রের ভয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা সকলেই বলেছিলেন দেশের সর্ববৃহৎ সেতু হবে ভোলা-বরিশাল ব্রীজ। শুধু বৃহৎ বলেই শেষ করেছেন কিন্তু তাদের ফ্যাসিবাদী আচরনের জানান দেওয়ায় ব্যস্ত থাকায় কাজের কাজ কিছুই করেন নাই। তাই আবারো দেশের চলমান দায়িত্বশীল তত্ত্বাবধায়ক বা ইন্টেরিম সরকারের নিকটও ভোলাবাসীর দাবী হলো — সরকার যেন ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মান করে ভোলাবাসীর কপালের দরজা বা ভাগ্যের দরজা খুলে দেয়। ছবিতে- ভোলা বরিশালের স্বপ্নেয় সেতু।