নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি।।
নওগাঁর মান্দায় কাশোঁপাড়া ইউনিয়নে ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের মধ্যে একটি মাত্র ইট ভাটার দাপটে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫০০ পরিবার। ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের গাছপালা, ফসলি জমি, মাছের পুকুর প্রভৃতি পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। আইন লঙ্ঘন করে লোকালয়ের মধ্যে বছরের পর বছর এই ভাটায় ইট পোড়ানো হলেও তা সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।এই ইট ভাটা বন্ধের দাবিতে ভাটার মালিক সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. সাইদুর রহমান মোল্যার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মান্দা উপজেলার কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের ভেতরে ইট ভাটা প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে ছবিরন ব্রিক্স নামে একটি অবৈধ ইট ভাটা যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলো সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. সাইদুর রহমান মোল্যা। এর আশপাশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট বাজার ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ার কারণে এখানকার জনগণ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তা ইউএনও'র নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়।ইট ভাটার মালিক মো. সাইদুর রহমান মোল্যা প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভয়ে এলাকার কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বর্তমানে ওই ইট ভাটার নাম পরিবর্তন করে ঝরনা ব্রিক্স নামে নতুন করে আবারও তা চালু হয়েছে। এর ফলে ইট পোড়ানোর সময় এর দূর্গন্ধে এখানে শত শত পরিবারের বসবাস করা দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় ইট ভাটার আঙিনায় যেসব পরিবার বসবাস করে তাদের দিন-রাত মেশিনের শব্দ ও ধুলাবালির কারণে তাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এছাড়া ইট ভাটার পোড়ানো ধোঁয়ায় জমির ফসল, ফলের বাগান, গাছপালা প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত, পরিবেশ দূষণ ও মানুষের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। তাই নিরুপায় হয়ে ইট ভাটা বন্ধের জন্য ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের মো. ইসমাইলের ছেলে সাদেকুল ইসলাম মান্দা ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ বিঘা জমির উপর ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামে ঝরনা ব্রিকস নামের ইট ভাটায় কয়েকজন শ্রমিক ইট পোড়ানো জন্য চুলায় আগুন দিচ্ছেন। অন্যদিকে শ্রমিকরা ইট তৈরির কাজ করছেন। যার পাশে রয়েছে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, মাদ্রাসা এবং একটি ঐতিহাসিক কাঠখৈর হাট ও বাজার। এছাড়াও রাস্তা ঘাটের অবস্থা বেহাল। চারপাশে রয়েছে বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি, মাছের পুকুর প্রভৃতি। যা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।আন্ধারিয়া পাড়ার গ্রামের মো. সাবুল জানান, ইট ভাটার গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তায় যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। গ্রামের ভেতর ইট ভাটা স্থাপন হওয়ায় সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হয়। আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। ভাটার ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। এই ইট ভাটা অতিদ্রুত বন্ধ করা না হলে জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, এই অবৈধ ইট ভাটার কারণে ফসলি জমি ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে। আশপাশের বসতবাড়ির গাছপালা মরে যাচ্ছে। এলাকায় শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় মানুষের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভাটার মালিক খুব প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থীরা জানায়, ভাটার কারণে এই এলাকার রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় পুরো শরীর ধুলোবালিতে ভরে যায়। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেহেতু বাসার কাছেই স্কুল কোনো উপায় নেই কষ্ট করে যেতে হয়।ঝরনা ব্রিক্স ইট ভাটার মাালিক মো. সাইদুর রহমান মোল্যা জানান, ভাটা অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছি। তবে ২০১৩-১৪ সালে লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র আপডেট ছিলো। যখন এই ভাটাটি ২০০৩ সালে স্থাপন করা হয়, তখন ওই সময় বসতবাড়ি ছিলো না। বর্তমানে এই গ্রামের যারা হতদরিদ্র মানুষ তারা আমার ইট ভাটাতে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে ধোঁয়ার কারণে সাধারণ মানুষে যে কষ্ট হচ্ছে তা সত্য নয়। এ বিষয়ে কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম জানান, ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা ঝরনা ব্রিক্স নামে যে ইট ভাটা রয়েছে সেটি সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. সাইদুর মোল্যা ক্ষমতার দাপটে ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। যেখানে ভাটা সংলগ্ন বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফলের বাগান, ফসলী জমি এসব মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।