নুরুজ্জামান লিটন,স্টাফ রিপোর্টার ।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর ইউপির নুনুজ কালিমিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।এসব অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবি তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক,দুর্নীতি দমন কমিশন,জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা।এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ অক্টোবর সহকারী কমিশনার, শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়,এবং ৩১ অক্টোবর অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে তদন্ত শেষে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেই অধ্যক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করে গত ২৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন।তারপর থেকে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী ও অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে, গত ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক টিউশন ফি'র সমুদয় টাকা আত্মসাত,শিক্ষকদের কাছে থেকে বিভিন্ন নামে চাঁদা তুলে টাকা আত্মসাত,শিক্ষকের প্রাপ্য ছুটি না দিয়ে বেতন কর্তন করে টাকা আত্মসাত করেছেন এবং অধ্যক্ষ নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত না থেকে যেদিন মাদ্রাসায় আসেন সেই দিনই তাঁর অনুপস্থিত দিনগুলোতে স্বাক্ষর করেন।এছাড়াও অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছেমতো বিপুল অংকের ঘুস গ্রহণ করে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে যাবতীয় কার্যক্রম মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সদস্যগণের উপস্থিতিতে সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক হওয়ার বিধান থাকলেও তিনি গোপনে সব একাই করেছেন।এছাড়া ও রেজুলেশন খাতা ফাঁকা রেখে পরবর্তীতে ইচ্ছেমতো অসৎ উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করতেন,শিক্ষিকাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে বা শিক্ষকদের ব্যাংক লোনের জন্য স্বাক্ষর নিতে গেলে দিতে হতো মোটা অংকের ঘুস।ফরম পূরণের টাকা,প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর টাকা ও শিক্ষার্থীদের ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির টাকা ও অধ্যক্ষ আত্মসাত করেছেন বলে জানা যায়।এসব দুর্নীতি আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগকারীদের তিনি দিয়েছেন নানা রকম হুমকিধামকি ও। নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাস্তি প্রদানের সুপারিশ হিসেবে লিখিত বক্তব্যে জানান,নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলাধীন নুনুজ কলিমিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও জাতীয় দিবসগুলোর প্রতি অধ্যক্ষ সাহেবের অবহেলা এবং অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সরেজমিনে তদন্তকালে দেখা যায় যে, উক্ত মাদ্রাসার সকল শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের জবানবন্দির মাধ্যমে অধ্যক্ষ সাহেবের বিরুদ্ধে অর্থআত্নসাৎ, প্রতারণা, অর্থের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং টিউশন ফি'র সরকারি অর্থ আত্মসাতের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় নুনুজ কলিমিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।এ বিষয়ে উক্ত মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান,এই অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা অতিষ্ঠ, মাদ্রাসায় উন্নতির প্রচেষ্টা না করে সবসময় নিজের পেট ভরাতে ব্যস্ত থেকেছেন।তার কারণে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ক্ষোভে শিক্ষক ও এলাকাবাসীদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।আমরা দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের অপসারণ চাই।একজন শিক্ষার্থী জানান,আমি প্রিন্সিপালের বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগকারী হওয়ায় প্রিন্সিপাল আমাকে হুমকি দিয়েছে, সে অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছে,তার কল রেকর্ড আমার কাছে আছে।এ বিষয়ে ১৮ ডিসেম্বর,সকাল ১১ টায় বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উক্ত অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম জানান,নওগাঁ জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে ঐ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল,আমি সরেজমিনে গিয়ে সারাদিনব্যাপী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ,শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছি।তাদের ভাষ্য ও লিখিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান হওয়ায় জেলা প্রশাসক বরাবর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছি।এখন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা রাখি।