পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।
পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর বগা পয়েন্টে একটি সেতুর জন্য দুর্ভোগে রয়েছে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা—এই তিন উপজেলার মানুষ।ফেরি ও ট্রলারে নদী পারাপারে সময় নষ্টের পাশাপাশি নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ছে বিভাগীয় শহর ও রাজধানীগামী ৮ লাখেরও বেশি মানুষ। মাত্র একটি সেতুর জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন শহরগামী রোগীরা।পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো হয়েছে ফেরিমুক্ত কিন্তু পটুয়াখালীর তিন উপজেলায় যাতায়াতে এখনো ভরসা ফেরি। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ফেরি ও ট্রলারে নদী পারাপারে সময় লাগছে বেশি।তিন উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ দেশের সার্বিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন লোহালিয়া নদীর ওপরে বগা সেতু নির্মাণ। কেননা রাজধানী ঢাকা যেতে বগা ছাড়া অন্য কোথাও ফেরি পারাপার হতে হয় না।এ ছাড়া ট্রলারে করে এই নদী পাড় হতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। জেলার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বাউফল। এই উপজেলাতে রয়েছে দেশের প্রাচীনতম বাণিজ্যিক এলাকা কালাইয়া ও কালিশুরি বন্দর।এখান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যায় শতশত ভারী ও মাঝারি আকৃতির ট্রাক। বাউফল-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে বগা ফেরি হয়ে রাজধানীতে চলাচল করে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বহু যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন।পরিবহন চালক দেলোয়ার বলেন, ‘সব জায়গাতে এখন ব্রিজ হইয়া গেছে। এখন শুধু বগা ফেরিতে আইসা অনেক সময় ভোগান্তিতে পরি। আমাদের আইতে-যাইতে অনেক সমস্যা হয়।’মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ী বিজন পাল বলেন, ‘বাউফল কাগজীরপোল থেকে মৃৎশিল্পের কিছু মাল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। পথে ভোগান্তি সুধু এখানটাতেই আর অন্য কোথাও ভোগান্তি নেই। যদি এখানে ফেরি না থেকে ব্রিজ থাকতো তাহলে যেতে সময় অনেকটা কম লাগতো। ভাড়া দুই টাকা বেশি গেলেও ব্রিজ হলে ভালো হয়।’স্থানীয় রিয়াজ মুন্সি বলেন, ‘সেতুটা আমাদের জন্য খুব দরকার। অনেক সময় আমরা অনেক রোগী নিয়ে যাই তখন দেখা গেছে ফেরি ওপারে থাকে, ফেরি আসতে আসতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।অনেক সময় রোগী মারা গেছে এমন ঘটনাও ঘটছে। আর ব্রিজ থাকলে সময় নষ্ট হতো না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল নিয়ে যেতে পারতাম। সরকারের কাছে অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব ব্রিজটা করে দেওয়ার জন্য।’বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, বগা সেতু না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলো আমাদের রোগীরা।আমাদের যে রোগীগুলো পটুয়াখালী, বরিশাল কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করি, সেই রুগীদের নিয়ে যাওয়ার সময় বগা সেতু না থাকায় ফেরির জন্য বসে থাকতে হয়।ফলে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হয়। ইমারজেন্সি রুগীদের জন্য তো সমস্যা শেষ নাই, দেরি হওয়ার কারণে অনেকে পথেই মারা যায়। আশা করি সরকার যত দ্রুত সম্ভব বগা সেতু নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ নেবে।’পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার লিমন বলেন, পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের আওতাধীন লেবুখালী, বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, আমরাগাছিয়া সড়কে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে লোহালিয়া নদীতে বর্তমানে বগা ফেরিঘাট আছে।ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণ স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এই বাস্তবতায় ২০২১ সালের মার্চ মাসের দিকে বাংলাদেশ-চিন যৌথ উদ্যোগে একটি ফিজিবাইটি স্টাই টিম কাজ করা শুরু করে। এই ব্রিজটির নাম হবে নবম বাংলাদেশ-চিন ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ।সেই ফিজিবাইটি রিসার্চের কাজ বর্তমানে সম্পূর্ণ হয়েছে। এর পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ এবং এর মূল্য সংযোজনপূর্বক ডিপিটি প্রণয়নের কাজ আমরা দ্রুত শুরু করতে পারবো। এটি অনুমোদন হলে দু-এক বছরের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।