• সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

টাঙ্গাইলের মধুপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব পালিত।

বাবুল রানা বিশেষ প্রতিনিধি মধুপুর টাঙ্গাইল 
Update Time : রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

বাবুল রানা বিশেষ প্রতিনিধি মধুপুর টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের মধুপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী গোষ্ঠ অষ্টমীকে ঘিরে গোষ্ঠ পূজা, গো-গ্রাস দান, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, সন্ধ্যায় মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্কিনীর মিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে রাত সারে ১১টা পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয় এ গোষ্ঠ উৎসব। বিচিত্র সংস্কৃতি চারণ ভূমি ও ব্রিটিশ বিরোধী ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহের প্রতিফলন মধুপুরের অন্যতম এ গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব। অতীতে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে মাসব্যাপি গোষ্ঠ মেলার আয়োজনে মধুপুর মদন গোপাল আঙ্গিনা থাকতো নানান বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভীড়। জায়গার সল্পতার কারনে গত ৫বছরেরও বেশি সময় ধরে গোষ্ঠ মেলা ব্যতীত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে এই গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসব।মদন গোপাল মন্দির এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সুধাংশু দেবনাথ  জানান, তিথি অনুযায়ী (অষ্টমী তিথি) গোষ্ঠ অষ্টমী দিনে সকালে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বর্ণিল সাজে রঙ বেরঙের পতাকা হাতে রাখাল (কৃষ্ণ) রাখালী (রুক্কিনী) সাজানো হয়। এরপর রাখালদের একটি র‌্যালিসহ মহারাণী হেমন্ত কুমারী স্মৃতি জড়িত মদন গোপাল আঙিনা থেকে নাটু গোপালকে (সাজানো বালক কৃষ্ণ) সাথে নিয়ে মন্দিরে আসা হয়। মদনগোপাল আঙিনার ওই মন্দির থেকে শ্রীকৃষ্ণকে আরেকটি (কুঞ্জ) মন্দিরে (মধুপুর ক্লাব সংলগ্ন) নিয়ে আসা হয়। রুক্কিনীকে রাখা হয় কুঞ্জ মন্দিরের বিপরীত দিকের আরেকটি মন্দিরে। পরবর্তীতে পূর্ব নির্ধারিত ধানখেতে নিয়ে যাওয়া হয় রাখাল দলকে। ধানখেতে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানকালীন খেতের চারিদিক সাত বার প্রদক্ষিণ করে রাখালেরা গরুকে ধান খাওয়াতে শুরু করে। এসময় মায়েরা কেউ পুত্র কামনায় আবার কেউ পুত্র বাৎসল্যে রাখালদের আদর করে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি খাওয়ান। পরে সেখান থেকে মন্দিরে ফিরে রাখালদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হয় দিনের ১ম পর্ব।মন্দির কমিটি সূত্রে জানা যায়, শ্রীকৃষ্ণ আর রুক্কিনির মধ্যে জাগতিক যে বিয়ে হয়েছিল সেই রাতের পর্বে থাকে রুক্কিনী-শ্রীকৃষ্ণের বিবাহোত্তর মিলন অনুষ্ঠান। রাত ১০টার দিকে মিলন মেলা অনুষ্ঠানে আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠে আবাল বৃদ্ধ বনিতা। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন, থানা ইনচার্জ এমরানুল কবীর, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান শুরুর আগমুহুর্তে আতশবাজীর আলোক সজ্জায় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো পৌর শহর।চারিদিক থেকে দলেদলে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে আবাল বৃদ্ধ মহা সড়কের দুপাশ ভরে যায়।  এর আগে সন্ধ্যা থেকে মদন গোপাল বিগ্রহ মন্দিরের ভিতরে দীর্ঘক্ষণ চলে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা। এরপরই সকালে পৃথক মন্দিরে রেখে আসা নাটু গোপাল রূপী শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্কিনীকে মিলন ঘটাতে চলে আনন্দ উল্লাস। একদিক থেকে একদল ঢাক বাদ্যের তালে নাচতে নাচতে নিয়ে আসে কৃষ্ণকে অপর দিক থেকে রুক্কিনী কে। এক ঘন্টার এ উৎসব উল্লাস শেষে মধুপুর পৌর শহরের সাথীর মোড় বটতলা (মিলনতলা) মিলন ঘটানো হয়। হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমবেত হয় এ দৃশ্য দেখতে। এ যেন সত্যিকারেই রুক্কিনী-কৃষ্ণের বিয়ে ও দুই জনের কাছাকাছি চলে আসা, যাকে স্থানীয়রা মিলন মেলা বলে অভিহিত করেন।এ উৎসবে যোগ দিতে দূরদূরান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) ভক্তরা মধুপুরের আত্মীয় বাড়িতে নাইওর আসেন। আগত আত্মীয়দের পূরবী (উপহার) দেওয়ার প্রথা চলে আসছে যুগযুগ ধরে। এখনও সে চর্চা ধরে রেখেছে মধুপুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠ অষ্টমী উৎসবকে কেন্দ্র করে।আগত দর্শনার্থীরা জানান, এক সময় এ উপলক্ষ্যে মাসব্যাপি মদন গোপাল আঙিনায় মেলা বসতো। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রা পার্টি, বিখ্যাত রওশন সার্কাস, পুতুল নাচ, যাদুকরদের যাদু খেলা, নাগরদোলা আসতো। সারি বেধে মিষ্টির দোকান, খেলনার দোকান এসবের পসরা নিয়ে বসত। যদিও এখন সে মেলা আর বসে না। হারানো ওই ঐতিহ্য এখন বয়স্কদের কাছে কেবলই স্মৃতি। রূপকথার মতো মনে হয় কিশোর-কিশোরীদের কাছে। অধিকাংশ সনাতনীদের স্বপ্ন, দখলদারদের থাবা থেকে মদন গোপাল আঙিনা মুক্ত করে আবারও এলাকার এ ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান।


এ বিভাগের আরও সংবাদ