নওগাঁর বদলগাছীতে পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করলেন শ্বাশুড়ি।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মথুরাপুর ইউপির চকমথুর গ্রামে।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউপির চকমথুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক হোসেন বিয়ে করেন একই গ্রামের ডাঙাপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের প্রথম কন্যাকে।
গত শুক্রবার ফারুক হোসেনের স্ত্রী তার শ্বাশুড়িকে না জানিয়ে গরু ছাগলের ঘাস কেটে নিয়ে আসার নাম করে বাবার বাড়িতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। ভুক্তভোগী জামাতা (স্বামী) ফারুক হোসেন শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে তার বাড়িতে ফিরে আসার জন্য বললে (স্ত্রী) জানান তিনি আর আসবেন না। এমতাবস্থায় উপায়ন্তর না পেয়ে ফারুক হোসেন ফিরে আসেন তার নিজ বাড়িতে।
জামাতা ফারুক হোসেন তার শ্বশুর বাড়ির নিকটে সিদ্দিকুর রহমান নামক ব্যক্তির নিকট হতে ৩(তিন) বিঘা জমি চুক্তি ভিত্তিক ১ বছরে ৪২ মণ ধানের বিনিময়ে বর্গা নিয়ে কিছু জমিতে পটল আবাদ করেছিলেন এবং কিছু জমিতে ধান চাষ করেন।গত শনিবার পটল তোলার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন তার শ্বাশুড়ি সখিনা খাতুন সহ কয়েকজন হাসুয়া বটি ও ধরালো অস্ত্র দ্বারা পটল ক্ষেতের অর্ধেক ক্ষেত কেটে ফেলেছেন।
এমন দৃশ্য দেখে ভুক্তভোগী সেখান থেকে সরে চলে আসেন।
প্রতিবেদক ঘটনার অনুসন্ধানে সরিজমিনে গিয়ে দেখেন, পটল ক্ষেতের অর্ধেক অংশ কেটে ফেলা হয়েছে পটল লতা পাতা এলেমেলো ভাবে পড়ে আছে। আর বাঁশের খুটি বেড়া কিছুই নেই। বাঁকি অংশের খুঁটি ও বেড়া হেলে পড়ে আছে।
এ বিষয়ে ভূক্তোভোগী জামাতা ফারুক হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জমিটি আমি নিজ জিম্মায় বর্গা নিয়েছি। মোট জমির পরিমাণ ৩(তিন) বিঘা এরমধ্যে আমি নিজে আবাদ করি ২ বিঘা ৫ শতাংশ ও আমার শ্বশুর মৃত দুনু মন্ডল কে আবাদ করার জন্য দেয় ১৫ শতাংশ। সে-ই ধারাবাহিকতায় আমার শ্বাশুড়ি আমার সব জমি তাঁর দাবি করে আবাদকৃত পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করে ফেলেছে।
এবিষয়ে ভূক্তোভোগী জামাতা ফারুক হোসেন এর শ্বাশুড়ি সখিনা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন , জমিটি আমিও আমার জামাতা মিলে বর্গা নিয়েছি। কিন্তু আমার জামাতা একাই আবাদ ফসল করে আমাকে কিছুই দেয় না তাই আমি আলু আবাদ করার জন্য অর্ধেক পটল ক্ষেত কেটে ফেলেছি।
উক্ত বিষয়ে জমির মালিক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঐখানে মোট ৩ বিঘা জমি ফারুক হোসেন কে চুক্তি ভিত্তিক বর্গা দিয়েছি। এরমধ্যে ফারুক আমাকে জানায় সে নিজে ২ বিঘা ৫ শতাংশ আবাদ করবে এবং তার শ্বশুর দুদু মন্ডল আবাদ করবে ১৫ শতাংশ। সেই শর্ত মোতাবেক রাজি হয়ে আমি ফারুককে জমি বর্গা দিয়েছি। যে জমির পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করা হয়েছে সেটা কার অংশ জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে জমি তাদের দেওয়ার পর কে কোনটাতে আবাদ করে সে সম্পর্কে আমার জানা নাই।
উক্ত বিষয়ে চকমথুর পূর্বপাড়া গ্রামের মামুন, তৌফিক ও ভূক্তোভোগী ফারুকের এর মাতা নূরনাহার মুঠোফোন জানান, আমাদের চোখের সামনে পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এবং তারা ফারুকের ধান ও কেটে ধ্বংস করবে বলে সেখানে(পটল ক্ষেত কাটার সময়) হুমকি দেয়।
উক্ত বিষয়ে মাথুরাপুর ইউপির সংশ্লিষ্ট গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গাফফারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত শুক্রবার ফারুক হোসেন এর শ্বাশুড়ি সখিনা খাতুন আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনার কথা জানায়। সেই মোতাবেক আমি সখিনা খাতুনের বাড়িতে তদন্তের জন্য যাই। গিয়ে আমি দেখি সখিনা খাতুনের মেয়ে ও ফারুক হোসেন এর স্ত্রী শাকিলা বেগম সেখানে আছে। কি হয়েছে জানতে চাইলে শাকিলা বেগম কোনো কথা না বললেও তার মা সখিনা খাতুন বলেন আমার জামাই ও তার মা আমার মেয়েকে প্রতিদিন মারধর করে তার বিচার করে দিতে হবে।
আপনি তো কোনোদিন সালিশ ডাকেন নাই বা আমাদের জানাননি প্রশ্ন করলে সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংসের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বলেন, পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করার বিষয়ে ফারুক আমাকে জানিয়েছে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এটা ফারুকের জমি না তার শ্বাশড়ির জমি সেটা জানা নাই। তবে ফারুক এর যদি হয় তাহলে পটল ক্ষেত কেটে ধ্বংস করা তাঁর শ্বাশুড়ির অন্যায় হয়েছে।