পর্যটন মৌসুমের শুরুতে শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকে টইটম্বুর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। তবে পর্যটকদের টার্গেট করে অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এমনকি তাদের সিন্ডিকেটে ধরাশায়ী হচ্ছে স্থানীয় পথচারীরাও। অনিয়ন্ত্রিত এ চালকদের আচরণে অতিষ্ঠ পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বহিরাগত চালকদের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন ইজিবাইক ও অটোভ্যান সংগঠনের নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দূরপাল্লার পরিবহন রাত ১১টার পর থেকে কুয়াকাটার তুলাতলী বাসস্ট্যান্ডে আসতে শুরু করে। সেটাকে কেন্দ্র করে অটোভ্যান সিন্ডিকেট একটি বড় সুযোগ নিয়ে থাকে। ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা বাজলেই জনপ্রতি ১০ টাকার ভাড়া হয়ে যায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কখনো কখনো আরও বেশি। ঝড় বৃষ্টি থাকলে তো আর কথাই নেই, শুরু হয় পর্যটকদের পকেট কাটার প্রতিযোগিতা। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তাদের রোষানলে পড়তে হয়। শুনতে হয় অকথ্য ভাষার গালিগালাজ। এমনকি কেউ কেউ তো তেড়ে আসেন মারধর করতে। তাই মান সম্মান হারানোর ভয়ে কেউ কথা বলছেন না।
তবে এই দায়ভার কাঁধে নিতে অস্বীকার করেছেন, কুয়াকাটা ইজিবাইক সমবায় সমিতি ও অটোভ্যান মালিক সমিতির নেতারা।
তারা দাবি করেছেন, রাতে বহিরাগত চালকরা এসে এই সিন্ডিকেট তৈরি করছেন। এতে তাদের সংগঠনসহ কুয়াকাটা সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অতি দ্রুত প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেন সংগঠন দু’টির নেতারা।
প্রায় দীর্ঘদিন পরে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পর্যটকের মিলন মেলা বসেছে। এতে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছেন হোটেল মোটেল এবং সমুদ্রের পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। দূর্গা পূজার ছুটিতে কুয়াকাটা বেড়াতে আসার পর্যটকদের বরাবরের মতো আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সৈকতের ক্যামেরাম্যান, মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও ইজিবাইক ও অটোভ্যান চালকদের বিরুদ্ধে ছিল বিস্তর অভিযোগ।
শনিবার (১২ অক্টোবর ) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শারদী দুর্গাপূজার লম্বা ছুটিতে পর্যটক কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে লেম্বুরচর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, গঙ্গামতির লেক এই স্পোর্টগুলো সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে। এ স্থানগুলো ঘিরেও রয়েছে বড় ধরনের সিন্ডিকেট যেখানে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া রয়েছে। সেখানে পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
ভুক্তভোগী পর্যটক রায়হান বলেছেন, সূর্যাস্ত দেখার উদ্দেশ্যে লেম্বুর চরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসে দু’জনে এক হাজার টাকা দিয়েছি। অথচ অন্যজনকে মাত্র ৩০০ টাকা দিতে দেখেছি। এমন সিন্ডিকেট কুয়াকাটা চলতে থাকলে পর্যটন ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যাবে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী জাকারিয়া জাহিদ ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “দৃষ্টি আকর্ষণ: কুয়াকাটার তুলাতলি বাসস্ট্যান্ডে অটোভ্যান সিন্ডিকেট একটি বড় সমস্যা। রাত যখন বারোটা তখন শুরু হয় তাদের সিন্ডিকেট। ১০ টাকার ভাড়া হয়-১৫০-২০০ টাকা। প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের মুখের ভাষা অসহনীয়। কেউ কেউ তেরে আসে। কুয়াকাটা পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কুয়াকাটায় দূর পাল্লার পরিবহন আসে রাত ১১টার পর। সেই যাত্রীদের তুলাতলি বাসষ্ট্যান্ড না নামিয়ে কুয়াকাটা চৌরাস্তায় যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হোক। যাতে ট্যুরিস্ট এবং এলাকার মানুষ কোন ধরনের হয়রানি না হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং অদক্ষ চালকের কারণে প্রচুর দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে যারা গাড়ি চালায় তারা বহিরাগত। আমাদের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে এসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে পর্যটকদের হয়রানি করছেন। এর সাথে আমাদের সংগঠনের কেউ জড়িত নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি অতি দ্রুত এগুলোকে চিহ্নিত করে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে পর্যটক বান্ধব কুয়াকাটা উপহার দিব।
মুঠোফোনে অটোভ্যান সভাপতি মোঃ ইসমাইল বলেন, আমাদের সংগঠনের আওতায় যারা রয়েছে সবাইকে একটি নিয়মের মধ্যে চলতে হয়। ভাড়া নির্ধারণ করা রয়েছে। রাত গহীন হলে বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটা যেকোন হোটেলে নিলে জনপ্রতি ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা করার নির্দেশ রয়েছে। তবে যারা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছে তারা আমাদের সংগঠনের কেউ নয়। সংগঠনের কোন ব্যক্তি এ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকলে তাহলে তাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর বিচারের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি আপনার মাধ্যমে শুনেছি, অবশ্যই এটা বড় সিন্ডিকেট। আমরা যাতে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলা ভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে সিন্ডিকেট মুক্ত রাখতে এ বিষয়ে মাঠ পর্যায় তদন্ত রয়েছে। ইজিবাইক ও অটোভ্যান এই দুই সংগঠনের সাথে বসে সুন্দর একটি সিদ্ধান্তে নিব।’